নারায়ণগঞ্জ থেকে অ্যাজমার এবং চর্ম রোগের সমস্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন হাসনা বানু (৬২)। হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে তাকে ঘিরে ধরেন।

এদিকে হাসনা বানুর শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। এদিকে কারও খেয়াল নেই। কে কার আগে ছবি তুলবেন রীতিমতো তার প্রতিযোগিতা চলছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর এমআরদের কয়েকহাত ঘুরে প্রেসক্রিপশন রোগীর হাতে আসতে প্রায় দুই থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় সঙ্গে থাকা মেয়ে এক প্রকার যুদ্ধ করে প্রেসক্রিপশন নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। উদ্দেশ্য একটাই কোন্‌ কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন চিকিৎসক এটা দেখা। বেশি ভোগান্তিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রোগীরা মুমূর্ষু অবস্থায় থাকলেও হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির উৎপাতের এ চিত্র বদলায় না। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এই উৎপাত বন্ধে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি হাসপাতাল এলাকায় প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে পারবে না বলে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে লিখিত আদেশে নির্দেশনা দেয় হয়। এতে বলা হয়, কোনো অবস্থাতেই হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসক প্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র চাইতে বা দেখতে এবং ছবি তুলতে পারবে না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার ও রোববার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। এ ছাড়া অন্য কোনো দিন বা সময়ে হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান কিংবা মোটরসাইকেলও রাখতে পারবেন না।
রিপ্রেজেন্টেটিভকে নিয়ে চিকিৎসকের মতামত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালে এক ওষুধ রিপ্রেজেন্টেটিভকে রীতিমতো চিকিৎকের কক্ষে বসে পাহারা দিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগের দায়িত্বরত এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আরেক চিকিৎসক অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, আমরা চাইলেও তাদেরকে সরাতে পারছি না। ঊর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে তারা এ পর্যন্ত আসে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন আউয়াল হোসেন দম্পতি। চিকিৎসকের কক্ষের বাইরে তিন-চারজন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে অবস্থান করতে দেখে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক তাদের বাইরে চলে যেতে বলেন। এ সময় শিশু রোগীর স্বজন রীতিমতো স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, মুগদা হাসপাতালে গিয়েছি সেখানে প্রেসক্রিপশন দেখতে গিয়ে তো ছিঁড়েই ফেলেছে তারা। আউয়াল বলেন, ডাক্তার দেখে বের হতেই আমার হাত থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলছে। এগুলো কেমন আচরণ? কোম্পানিগুলোর এমআরদের এমন হেনস্তা ও বিড়ম্বনার অভিযোগ এই হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা প্রায় অধিকাংশ রোগীর।

এ বিষয়ে এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, মাসিক একটি টার্গেট থাকে। সেটা পূরণ করতে হয়। টার্গেট পূরণ করতে আমাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখলে বিশেষ উপহারের ব্যবস্থা থাকে চিকিৎসকদের জন্য। আমরা হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকি চিকিৎসকরা আমাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। যদি এটা আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক নয় বলে অনুতাপ প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। হাসপাতালের রোগীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সবার আগে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

বি/ সুলতানা